এবার ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে তিন দিন বয়সী এক কন্যাশিশুকে গতকাল মঙ্গলবার ৮ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। চার ঘণ্টা পর বিকাল ৩টার দিকে জীবিত অবস্থায় শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শিশুটি বেঁচে আছে। তবে প্রিম্যাচিউরড হওয়ায় অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। নবজাতক ওয়ার্ডের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) তার চিকিৎসা চলছে।’
এ সময় ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, ‘শ্বাস-প্রশ্বাস না পাওয়ায় হয়তো ভুলক্রমে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেছেন চিকিৎসক। ঘটনাটি তদন্তে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও দন্ত বিভাগের চিকিৎসকের সমন্বয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হবে বুধবার। এদিন সকাল থেকে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করবে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার ঘটনায় জড়িত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে হাসপাতাল সূত্র ও নবজাতকের পরিবার জানিয়েছে, ত্রিশাল উপজেলার কানিহারী ইউনিয়নের বাড়মা গ্রামের মাদ্রাসাশিক্ষক সাইফুল ইসলামের স্ত্রী হালিমা খাতুন ৬ আগস্ট ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এক কন্যাশিশুর জন্ম দেন। সাত মাসে জন্ম নেওয়া এই শিশুর ওজন ৯০০ গ্রাম। কম ওজন ও সাত মাসে জন্ম হওয়ায় শিশুটিকে প্রিম্যাচিউরড বলে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করে মৃত্যুর সনদপত্র দেন নবজাতক ওয়ার্ডের কতর্ব্যরত চিকিৎসক।
দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালের সব প্রক্রিয়া শেষে ‘লাশ’ গ্রহণ করেন বাবা সাইফুল ইসলাম। পরে সিএনজি অটোরিকশাযোগে হাসপাতাল থেকে বাড়ির পথে রওনা হন। ময়মনসিংহ সদরের চুরখাই এলাকায় পৌঁছালে নবজাতক নড়েচড়ে ওঠে এবং জোরে শ্বাস নিতে শুরু করে। এ অবস্থায় তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন বাবা। তখন সেখানে কর্তব্যরত মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. মাহবুব হোসাইন শিশুটিকে ভর্তি করে নবজাতক ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন।
এদিকে নবজাতক ওয়ার্ডের প্রধান চিকিৎসক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুটিকে বর্তমানে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তবে অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। যেহেতু শিশুটি প্রিম্যাচিউরড সেহেতু তার হার্ট ও অন্যান্য অঙ্গ প্রিম্যাচিউরড, হয়তো দুপুরে শ্বাস-প্রশ্বাস না পাওয়ায় মৃত ঘোষণা করেছেন চিকিৎসক। পরে দেখা গেছে, জীবিত।’
এ সময় নবজাতকের বাবা সাইফুুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে মৃত ঘোষণার পর শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলাম। অটোরিকশাযোগে সদরের চুরখাই এলাকা অর্থাৎ ১২ কিলোমিটার পথ যাওয়ার পর শিশুটি শ্বাস নিতে শুরু করে। কীভাবে জীবিত হয়েছে, জানি না। তাকে ভালো চিকিৎসা দিয়ে চিকিৎসকরা সুস্থ করে দেবেন, টাই আমার প্রত্যাশা।’